জেনে নিন ডিজিটাল মার্কেটিং কি | ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা

আমরা নানা পেইজে,গ্রুপে এবং নানান ব্লগে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে নানা কথা শুনলেও আমরা যারা ডিজিটাল মার্কেটিং কি,ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করা হয় এসব নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না তাদের কাছে এই ব্যাপারটা শুধু ধুয়াশার মতো লাগে। তাই আজ আমি ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন।

 

এখন ২০২২ সাল। এসময়ে সবকিছুই ডিজিটাল বা ভার্চুয়ালি হয়ে গেছে। এখন আর মানুষ প্রতিদিন এত কষ্ট করে অফিসে গিয়ে চাকরি করে না কারণ এখন অনেকেই তাদের নিজেদের ঘরকেই চাকরি ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে। এখন আর মানুষ কেনাকাটা করার জন্য ভিড়ের মধ্যে শপিং মলে যায় না কারণ এখন ঘরে বসেই যেকোনো প্রোডাক্ট কেনা যায়।

সেই সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন কম্পানিও বসে নেই। তারা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের কম্পানির মার্কেটিং করা শুরু করে দিয়েছে। কথা না বাড়িয়ে আসুন আমাদের মেইন টপিকে ফিরে যাই।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি

 

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কথা বলার আগে মার্কেটিং নিয়ে একটু কথা বলে নিই।

কোনো একটি কম্পানির প্রোডাক্টের প্রচার করাকে মার্কেটিং বলা হয়। সচারচর আমরা দেখি বাজারে বিভিন্ন কম্পানির লোকের এসে দোকানদারকে তাদের প্রোডাক্ট এর ভালো ভালো দিক গুলো তুলে ধরে এবং দোকানদারকে প্রোডাক্ট টি নিতে হবে। এটাই হলো মার্কেটিং। এটাকে আমরা প্রচলিত মার্কেটিং হিসেবে ধরবো।

এবার আসি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথায়ঃ

ডিজিটাল মাধ্যম যেমনঃ গুগল,ফেসবুক,ইউটিউব,টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো কম্পানির প্রোডাক্ট এর প্রমোশন বা প্রচার করার পদ্ধতিকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়।

যেমনঃ আমরা ফেসবুকে গেলে Sponsored লেখা অনেক ভিডিও এবং আর্টিকেল দেখতে পাই আবার ইউটিউবে ভিডিওর মাঝে মাঝে কিছু এড দেখতে পাই। এগুলোই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করা হয়

আপনি কৃষি জমিতে চাষাবাদের কাজ করেন বা ব্যবসা করেন আপনাকে মেইন একটা বিষয় মেনে চলতে হবে যেট হলো প্রোডাক্ট এর প্রোডাকশন কস্ট (খরচ) বাড়ানো যাবে না। কারণ পণ্য উৎপাদন করতে বা বিক্রি করতেই যদি আপনার খরচ অনেক বেড়ে যায় তাহলে আপনার বেশি লাভ হবে না।

ধরেনঃ আপনার একটি কলেমের কম্পানি আছে। যেখান থেকে আপনি সারা দেশে কলম বিক্রি করতে চান। তাহলে তো আপনার কম্পানির জন্য অনেক মার্কেটিং করতে হবে না হলে মানুষ আপনার কলম কম্পানির কথা জানবেই না।

এখন আপনি ১০ জন মার্কেটার হায়ার করলেন যাদের কাজ থাকবে লোকজনের কাছে গিয়ে আপনার কম্পানির কথা বলা।

এখন তারা যে যাতায়াত বা খাওয়া দাওয়া করবে তার খরচ কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে। তাহলে সব খরচ মিলিয়ে ১০ জনের কন্য প্রতি মাসে আপনার এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হবে।

এত টাকা খরচ করেও কিছু মাসে দেখবেন আপনার বেশি সেল আসবে না।

কিন্তু যদি আপনি মাত্র ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়েই ঐ ১০ জনের কাজ করে ফেলতে পারেন তাহলে কেমন হয়!!!

জ্বী হ্যাঁ, আপনি যদি সঠিক অডিয়েন্স অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে আপনার বাড়তি কোনো লোকজনের প্রয়োজন হবে না। আপনি এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ মাত্র দশ থেকে বিশ হাজার টাকায় করে ফেলতে পারবেন!!!

এর জন্য বর্তমানে সকল কম্পানি প্রচলিত মার্কেটিং এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছে কারণ এতে কম খরচে নিজের প্রোডাক্ট বেশি মানুষের কাছে নিয়ে তুলে ধরা যায়। এতে টাকার পাশাপাশি অনেক সময়ও বেঁচে যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার

ডিজিটাল মার্কেটিং হলো বিশাল একটি সেক্টর। অনেক গুলো সাব সেক্টর নিয়ে এটি গঠিত। আপনি সব গুলো সাব সেক্টর বিষয়ে কিছু জানতে পারবেন তবে অনেকেই বলে পুরো ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেক্টরটা শিখতে গেলে আপনার সারা জীবনও লাগতে পারে। তাহলে একবার ভেবে দেখুন এটির বিস্তৃতি কত।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ

১/ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
২/ সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
৩/ ইমেইল মার্কেটিং
৪/ সিপিএ মার্কেটিং
৫/ কনটেন্ট মার্কেটিং
৬/ ইউটিউব মার্কেটিং, ইত্যাদি।

নিচে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)

অনলাইন জগৎে অনেক গুলো সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইট আছে যেমনঃ Google,Yahoo,Bing ইত্যাদি। এসব সাইট গুলোতে প্রতিদিন অনেক মানুষ এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সার্চ করে।

ধরেনঃ আপনার কলম কম্পামির একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে কলম নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করেন। এখন আপনি আপনার সাইটের সকল পোস্ট এবং পেইজকে যদি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড করে তুলেন তাহলে আপনি সার্চ সাইট গুলো থেকে প্রতিদিন হাজার থেকে লাখ লাখ ভিজিটরও পেতে পারেন।

কারণ, মনে করুন কেউ একজন গুগলে গিয়ে “Best Pen Company In Bangladesh ” লিখে সার্চ দিলো তখন আপনার সাইটের আর্টিকেল টি সবার সামনে আসবে এবং লোকজন আপনার সাইটে যাবে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার (ফেসবুক,টুইটার ইত্যাদি) মাধ্যমে মার্কেটিং করার পদ্ধতিকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলা হয়। এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আবার কত গুলো ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

১/ ফেসবুক মার্কেটিং
২/ টুইটার মার্কেটিং
৩/ ইনস্ট্রাগ্রাম মার্কেটিং
ইত্যাদি।

ইমেইল মার্কেটিং

অডিয়েন্স দের ইমেইল কালেক্ট করে তাদের কাছে প্রমোশনাল মেইল পাঠয়ে মার্কেটিং করার পদ্ধতিকে ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়। এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। অনেকেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে।

কনটেন্ট মার্কেটিং

কনটেন্ট (আর্টিকেল, ছবি,ইনফোগ্রাফি,ভিডিও) এর মাধ্যমে মার্কেটিং করার পদ্ধতিকে কনটেন্ট মার্কেটিং বলা হয়।

ইউটিউব মার্কেটিং

ইউটিউবের মাধ্যমে কম্পানির মার্কেটিং করার পদ্ধতিকে ইউটিউব মার্কেটিং বলা হয়।

বর্তমানে ইউটিউব মার্কেটিং এবং ফেসবুক মার্কেটিং করে অনেক সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

নোটঃ উপরে আমি সব গুলো একটু আলোচনা করেছি। আপনি আমাদের পাশে থাকলে আমরা সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেল লিখবো।

ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়

আপনি যদি আপনার নিজের জন্য বা কোনো কম্পানির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান তাহলে প্রথমেই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে নিয়ে এবিষয়ে সব জেনে নিতে হবে। তারপর আপনার নিজের বা কম্পানির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ বা ইউটিউব চ্যানেল অপটিমাইজ করতে হবে।

 

আরো পড়ুনঃ

জেনে নিন ফ্রিল্যান্সিং কি কেন কিভাবে | বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং | Ridoy Hasan Alif

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা

আমি উপরে আলোচনা করেছি ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো একটি কম্পানির প্রচার করতে প্রচলিত মার্কেটিং এর তুলনায় অনেক কম সময় এবং টাকার প্রয়োজন হয়। তাই আপনার যদি ছোট একটি ব্যবসা থাকে তাহলে আপনার কাছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আর কোনো বিকল্প নেই।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ

দিন দিন বিভিন্ন কম্পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সেই সাথে মার্কেটারদের চাহিদা বেড়েই চলছে। আর আপনি যদি ভালো একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারেন তাহলে আপনার আর কোনো চিন্তা করতে হবে না কারণ আপনি নিজের কম্পানির জন্য কাজ করতে পারবেন এবং অনেক বড় বড় কম্পানির একজন ডিজিটাল মার্কেটার হয়েও কাজ করতে পারবেন। ভবিষ্যৎে ডিজিটাল মার্কেটিং চাহিদা আরো অনেক বাড়বে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

হয়তো অনেকেই আছেন যারা নিজে নিজে ফ্রিতেই সব শিখে প্রতি মাসে অনেক টাকা ইনকাম করছে কিন্তু সবাই তো নিজে নিজে শিখতে পারে না। আেনি যদি এডভান্সড লেভেলের মার্কেটিং শিখতে চান তাহলে আপনাকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ৩/৬ মাসের একটি কোর্স করে নিতে হবে। তবে যে প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করবেন প্রথমে তাদের ইউজার রিভিউ এবং তারা এ সেক্টরে সফল হতে পেরেছে কিনা এসব বিষয় দেখে নিবেন। কারণ কোর্স করানোর কথা বলে এখন অনেকেই টাকা মেরে খাচ্ছে। তাই সাবধান থাকুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধা

 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোনো সমস্যা নেই তবে যারা মার্কেটিং করবে তারা যদি তাদের কাজে কোনো ভুল করে তাহলে কোনো লাভই হবে না।

ধরুণঃ আপনি একটা সাইটের এসইও করতে গিয়ে ভুল কাজ করলেন তাহলে গুগল আপনার সাইটকে পেলান্টি দিয়ে দিবে।তাহলে আপনার টাকা বা সময় নষ্ট করেও কোনো লাভ হবে না। তাই যাই করেন না কেন সকল নিয়ম মেনে করবেন। তাহলেই সফল হবেন।

 

 

উপসংহারঃ

প্রিয় ভিজিটর,আমি আজকের এর আর্টিকেলে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি নতুন করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। তবুও আপনার যদি কোনো বিষয়ে জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।

আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।