সে বার গাঁ থেকে অনেকে গঙ্গাস্নানে করতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে গেলো। লালনও ঝোলা নিয়ে তাদের সাথে চলল। বেশ’ক দিন কাটলো সেখানে। এখন বাড়ি ফেরার পালা। ফেরার পথেই লালনের শরীরে প্রচন্ড জ্বর শুরু হলো।
সবাই বুঝতে পারলো যে তার শরীরে গুটিবসন্ত হয়ছে। জ্বরের প্রকোপে প্রলাপ বকতে বকতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে। কে দেখবে তাকে? তার সঙ্গীরাও তার থেকে দূরে চলে গেলো।
জব্র বাড়ার সাথে সাথে কজন মুখাগ্নি করে ভাসিয়ে সিলো নদীতে। এদিকে গায়ে রটে গেলো লালনের মৃত্যুর সংবাদ।
লালনের অসুস্থ শরীর ভাসতে ভাসতে কত গ্রাম, কত পথ পেরিয়ে গেলো।
ভাসতে ভাসতে ভেলা ঠেকল বড় এক গাছের শিকড়ে। সেখানে নদীর পাড় ভাঙছে, গাছটির শিকড়েরে কাছেই ছলাৎ ছলাৎ করছে ঢেউ।
গাছের পাশেই গ্রাম্য ঘাট। সারা দিন পুরুষ রা গোসল করলেও বিকালের এই সময়টায় শুধু মহিলারা আসে গোসল করতে। সে সময় গোসল করছিলো ৩ জন রমনী। এক সময় তারা লালনের কাতরানোর শব্দ শুনতে পেলো।
কাছে এসে লালন কে দেখেই দুজন ভয়ে দৌড় দিলো। বাকি একজন দাঁড়িয়ে রইলো।
হায় আল্লাহ, বেঁচে আছে।
কান লালনের দিকে নিয়ে যেতেই শুন্তে পেলো জল, জল,
জলের কথা শুনে রমণী আঁতকে উঠলেন। বললেন, আমরা মুসলমান!
তবু সে জাতের কথা ভুলে লালন কে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলো।
তার সেবা ও সিরাজ সাই এর ওষুধে সে কিছু দিনের মাঝেই সুস্থ হয়ে উঠলো।
কিছু দিন পর লালন চলল তার নিজ গাঁয়ে ।
গায়ে যাওয়ার পরে বলতে লাগলো ” মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে”।
কিন্ত গায়ের কেউ তাকে মানলো না। গায়ে চড়ে পড়লো লালনের জাগ গিয়েছে। সে মুস্লমান গরের অন্ন গ্রহণ করছে।
গায়ের লোক দের চাপে সে গাঁ ছাড়তে যাঅয়ার সময় মা বোঁ কাউকে পায়নি। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিলো।
তখন সে গান বাধলোঃ ” জাত গেলো জাত গেলো বলে, একি আজব কারখানা”